শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
শান্তিগঞ্জে সৈয়দ তালহা আলমের পূজামণ্ডপ পরিদর্শন ও অনুদান বিতরণ জগন্নাথপুরে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার  জগন্নাথপুরে পাষন্ড ভাগ্নের ঝাটার আঘাতে মামা নিহত লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জন কারাগারে জগন্নাথপুরে  ২ শতাধিক ভাসমান ব্যবসায়ীদের অপসারণ  বিএনপি সরকার গঠন করলে  প্রথম পর্যায়ে ৫০ লক্ষ পরিবার কে ফ্যামিলি কার্ড দেয়া হবে— কয়ছর এম আহমেদ হাসিনার বিচার চেয়ে ট্রাইব্যুনালে মাওলানা সাঈদীর মামলার সাক্ষী সুখরঞ্জন বালি ভোটাররা একটি সুস্ঠু নির্বাচনের অপেক্ষায় আছেন— কয়ছর আহমদ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন: কয়ছর এম আহমদ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি সরকার গঠন করবে — কয়ছর এম আহমেদ

মুসলমান বুঝেশুনে পড়ে না কোরআন

মুসলমান বুঝেশুনে পড়ে না কোরআন

মুহসিন আল জাবির :: সাধারণ মুসলমান- যারা ইসলাম সম্পর্কে পড়াশোনা করেনি, কোরআন অধ্যয়ন করার সুযোগ পায়নি, তাদের ভুল-ত্রুটি থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা কোরআন সম্পর্কে পড়ালেখা করেছেন যারা সমাজে ইসলামের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন জুব্বা-চাপকান পরে মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে তালিম দিচ্ছেন ইসলামের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন তাদেরই বা কতটুকু জ্ঞান রয়েছে এ কোরআন সম্পর্কে(?)।

প্রচলিত ‘মাওলানা’ পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করতে সময় লাগে বারো বছরেরও বেশি। গুটিকয়েক ‘মাওলানা’ দু-এক বছর বিশেষভাবে ফতোয়া, তাফসির, হাদিসের বিশেষ জ্ঞান ও আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেন। বাকি সব ‘মাওলানা’ই ডিগ্রি পেয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা আর ইসলাম প্রচারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

অথচ এই বারো বছরে তারা কোরআন সম্পর্কে অধ্যয়ন করেছেন ‘তাফসিরে জালালাইন’ নামক একটি গ্রন্থের পরীক্ষায় পাস করার মতো কিছু বিষয় আর ‘তাফসিরে বায়জাবি’ নামক একটি গ্রন্থের কয়েক পাতার দুর্বোধ্য আলোচনা মাত্র। তাহলে তাদের মেধার কোরআনিক জ্ঞানের আলোকচ্ছটা কীভাবে যুক্ত হবে!

এই ‘মাওলানা’দেরই যদি কোরআন সম্পর্কে জ্ঞানের এত অভাব থাকে তাহলে ইসলাম ও মুসলিমদের অবস্থা যে কত করুণ হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। তাই কোরআন অধ্যয়নে ইসলামের কল্যাণের দিকে লক্ষ্য করে ইসলামী পণ্ডিতদের এ বিষয়ে নতুন করে ভাবা উচিত বলে মনে হয়।

আজকের দুনিয়ার দিকে লক্ষ করলে দেখতে পাই, আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বে যারা ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছেন তারা যারা নিজেরাই ইসলাম সম্পর্কে বিশেষ করে কোরআন সম্পর্কে একেবারেই অজ্ঞ! তাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারে রয়েছে ‘জাল হাদিসের বিশাল মজুদ’! তাহলে তারা কীভাবে যুগের চাহিদা ও মানবজাতির প্রয়োজন অনুযায়ী ইসলামকে মানুষের সামনে তুলে ধরবেন? কীভাবে তারা বর্তমান বিশ্বের চ্যালেঞ্জকে মোকাবেলা করবেন?

ইসলাম সম্পর্কে জানার উৎস হল কোরআন ও বিশুদ্ধ হাদিস। এর বাইরে ইসলাম সম্পর্কে জানার আর কোনো মাধ্যম নেই। কিন্তু এ দুটি বিষয়কে বাদ দিয়ে এক ধরনের ‘বক্তা’ ‘যুক্তিবাদী’রা তাদের সভা, সমাবেশ, আলোচনায় মনগড়া, মিথ্যা, বানোয়াট ও কল্পকাহিনীকে ইসলামের নামে চালিয়ে দেন। মানুষ তাদের থেকে এই ইসলামই শিখে! তাদের খপ্পরে পড়ে একশ্রেণির মুসলমান প্রতিনিয়ত ইসলাম বিষয়ে প্রতারিত হচ্ছে। ফলে তারা না জেনে না বুঝে মুসলমানের সমাজে বিভ্রান্তি ছড়ায় এবং ইসলামের সত্যিকার জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয়।

কোরআন ইসলামের অবশ্য পাঠ্যপুস্তক। কোরআনে বলা হয়েছে, এ কোরআন ‘মানুষের জন্য হেদায়েত, সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন এবং সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।’ (সূরা বাকারা-২:১৮৫)। অনত্র বলা হয়েছে, ‘এ কোরআন মানুষের জন্য সুস্পষ্ট দলিল এবং দৃঢ় বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য হেদায়েত ও রহমত।’ (সূরা জাসিয়া, ৪৫:২০)। ‘

এ কোরআন সমগ্র জগতের জন্য উপদেশ ছাড়া কিছুই নয়।’ (সূরা কালাম, ৬৮:৫২)। অথচ এ কোরআন থেকে শিক্ষা নেয়ার কোনো আগ্রহ আমাদের দেখা যাচ্ছে না। আমাদের অধিকাংশেরই ধারণা, সুর তুলে কোরআন পাঠের জন্যই একে নাজিল করা হয়েছে। শুধু তেলাওয়াত করলে আর ঘরে শোকেসে সাজিয়ে রাখলেই দায়িত্ব খালাস! অথচ কোরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্য হল, কোরআনের উপদেশ গ্রহণ করে, তার বিধিবিধান মেনে নিয়ে ব্যক্তিজীবন, আধ্যাত্মিক জীবন, সামাজিক জীবন ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তার বাস্তবায়ন করা কোরআনের নির্দেশানুযায়ী জীবনের প্রত্যেকটি স্তরকে সাজিয়ে পথ চলা।

কোরআন হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য নাজিলকৃত জীবনবিধান। কোরআন বোঝা শুধু ধর্মীয় আলেম ও ইমামদের কর্তব্য নয়, একে বোঝা এবং এর উপদেশ ও বিধিবিধান জানা ও মান্য করা সব মুসলমানের জন্য আবশ্যক। তাই তো আল্লাহ রাসূল (সা.) কে উদ্দেশ করে বলে দিয়েছেন, ‘আমি তো তোমার ভাষায় কোরআন সহজ করে দিয়েছি যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সূরা দুখান, ৪৪:৫৮)।

আমরা দাবি করছি- কোরআন একটি মহাগ্রন্থ। কিন্তু আমরা আমাদের জীবনে সব গ্রন্থই বুঝে পড়ি একমাত্র কোরআন ছাড়া! আমরা যদি বিশ্বাস করে থাকি যে কোরআন মহাগ্রন্থ এবং একমাত্র নির্ভুল জ্ঞানের উৎস, তাহলে তো সর্বপ্রথম এই গ্রন্থটিকেই আমাদের বুঝে পড়া আবশ্যক। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিল শিক্ষাজীবন শুরু হবে এ মহাগ্রন্থ ও নির্ভুল জ্ঞানের একমাত্র উৎস কোরআন বুঝে পড়ার মধ্য দিয়ে। কিন্তু আমরা কি তা করতে পেরেছি?

এ গ্রন্থটি আমাদের জীবনের ইশতেহার। আমরা যদি কোরআনের সঠিক চর্চা করি, তাহলে এটি আমাদের চিন্তার জগৎকে আলোকিত করবে, মানব চরিত্র দৃঢ় স্বচ্ছ ও নির্মল করে তুলবে। নৈতিক চরিত্রকে ভরিয়ে তুলবে মাধুর্য দিয়ে। এটিই হবে মানবতার মুক্তির দিশারি!

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published.

© All rights reserved © 2017-2023 Jagannathpurnews.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com